ছবির মতো মিশে থাকে সবুজে লতাবট

প্রকাশঃ মার্চ ১৬, ২০১৫ সময়ঃ ৪:৫১ অপরাহ্ণ.. সর্বশেষ সম্পাদনাঃ ১০:৩১ পূর্বাহ্ণ

ডেস্ক রিপোর্ট, প্রতিক্ষণ ডটকম:

ভোরবেলা পিচঢালা কালো সড়কে আFicus-pumila-primary-growthয়েশি গতিতে এগিয়ে চলেছে ধোয়ামোছা চকচকে পর্যটন বাস। যাত্রীরা দু পাশের জানালা দিয়ে দৃষ্টি প্রসারিত করে রেখেছে পাশের সবুজ সৌন্দর্যে।

বেশ ঝাঁঝা করা একটা শব্দ আসছে রাস্তার পাশ থেকে। ঘাস কাটা মেশিনের আওয়াজ। ঘুম ভাঙা শহরের প্রথম কাজ হল বাগান পরিচর্যা।

কখনো বনের পাশ দিয়ে চলেছে বাস, যতদূর চোখ যাচ্ছে বনের গভীরে দেখা যাচ্ছে আগাছামুক্ত গাছ। গাছের কাণ্ডগুলি এত স্পষ্ট সাদা রঙ করা যে একটি একটি করে গোনা যায়।

নগরের এতসব নান্দনিক সবুজ চর্চার ভেতর একটি বিষয় কিন্তু সকলের মনে পরম বিস্ময় সৃষ্টি করছে। রাস্তার ওপরে যে সব সেতু আর উড়ালসেতু রয়েছে সেগুলোর অবয়বে কংক্রিটের চিহ্নমাত্র নেই, মনে হচ্ছে সবুজ লতার ওপর ভেসে আছে তারা।

পঞ্চাশ বছর আগে পরিপূর্ণ স্বাধীনতা লাভের পর সিঙ্গাপুরের প্রধান মন্ত্রী লি কুয়ান ইউ দেশ গড়ার কাজে নামলেন গার্ডেন-সিটির মতাদর্শ নিয়ে। তার ধারণায় ইট-পাথর-সিমেন্ট-কংক্রিটের রূক্ষ্ম পরিবেশ মানুষের আত্মিক উন্নতির পক্ষে অন্তরায়, এর জন্যে চাই সবুজের সমারোহ। এক চিলতে কংক্রিট আর সিমেন্ট যেন কারো চোখে না পড়ে সেজন্যে তিনি খুঁজে বের করলেন অদ্ভুত এক মোড়ক-লতা, যার নাম লতাবট।

ডুমুর শ্রেণীর এই লতাবট টিকটিকির মতো দেয়াল বেয়ে ওঠে দু’তিন তলা পর্যন্ত। এদের শরীরে ঝিঙ্গে-ধুঁধুলের মতো কোনো আঁকশি নেই, নেই করুণভাবে অন্যকে ধরপাকড় করে বেড়ে ওঠার সীমাবদ্ধতা। লতাবটের সন্ধি-শেকড় থেকে নিঃসৃত হয় পলিস্যাকারাইড আর প্রোটিনের একপ্রকার দারুণ আঠা যা প্রায় যে কোনো পৃষ্ঠেই লতাকে আটকে রাখতে পারে। দেয়ালে চড়ানো লতাবট বেশ কিছদূর পর্যন্ত এক মনে ওপরে উঠতে থাকে, যা প্রায় ছবির মতো লেপ্টে থাকে দেয়ালের সাথে। এক সময় এই উল্লম্ব গাছের পাশের দিকে ডাল গজায়। প্রাথমিক অবস্থায় পাতাগুলি থাকে বেশ ছোট, এক ইঞ্চির মতো লম্বা, হার্ট আকৃতির, কচি পাতা তামাটে রঙের।

Ficus-pumila-carpetগাছ পুষ্ট হলে পাশাপাশি ছড়ানো ডালগুলিতে পাতার আকার হয় ৩-৪ গুণ বড় এবং তখন গাছে ফলও ধরা শুরু হয়।

অতএব; ফল ধরা পর্যন্ত অপেক্ষা করলে গাছের সরল কার্পেটপ্রতীম সৌন্দর্য নষ্ট হতে পারে, যে কারণে ছেঁটে রাখার প্রয়োজন দেখা দেয়। ইনডোরে অবশ্য এ গাছের ফল ধরে না পুষ্টি ও বৃদ্ধির নিয়ন্ত্রণের কারণে।

হাইওয়ের দু’পাশের দেয়ালে লতাবট লাগালে শব্দদূষণ কমে যায় অনেক, কারণ এর পাতার বিন্যাস শব্দতরঙ্গ ভেঙে দিতে পারে অনায়াসে।

পুরনো কদর্য প্রাচীরকে নান্দনিক জীবন্ত রূপ দিতে এই লতার ভূমিকা অপরিসীম। অনেকে পুরনো গৃহের দেয়ালেও একে লাগিয়ে থাকেন তবে সেক্ষেত্রে জানালা এবং ঘুলঘুলির প্রতি খেয়াল রাখতে হয়, কারণ ছাঁটকাটে অমনোযোগী হলে দ্রুত বর্ধনশীল এই লতা এগুলো দারুণভাবে ছেয়ে ফেলতে পারে যা পরে নিয়ন্ত্রণ করা কষ্টকর হয়ে পড়ে।

এই লতার আরেকটি নান্দনিক ব্যবহার আছে টোপিয়ারি শিল্পে যা আমাদের দেশে বিক্ষিপ্তভাবে দেখা গেলেও অদ্যাবধি গুরুত্ব পায়নি। এই রকম নান্দনিক সৌন্দর্য দেশকে ছবির মতো করে তুলে সারা পৃথিবীর ভ্রমণ পেয়সী মানুষের কাছে। শুধু তাই নয় এই মনোরম নান্দনিক শিল্পর কারুকাজ দেখে মুগ্ধ হয় সবাই। ফুটিয়ে তুলতে পারে নিজেদের নগরী এই লতাবট দিয়ে।

প্রতিক্ষণ/এডি/আকিদ

আরো সংবাদঃ

মন্তব্য করুনঃ

পাঠকের মন্তব্য



আর্কাইভ

December 2025
SSMTWTF
 12345
6789101112
13141516171819
20212223242526
2728293031 
20G